"ডসনের পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ড পেল এক বিকল্প বাস্তবতার আভাস।"

"ডসনের পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ড পেল এক বিকল্প বাস্তবতার আভাস।" লর্ডস যেন আঙুলের জন্য অমঙ্গলময়! লর্ডস সম্প্রতি যেন আঙুলের জন্য এক অশুভ স্থান হয়ে উঠেছে। প্রথমে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে স্টিভ স্মিথ ভেঙে ফেলেন নিজের কনিষ্ঠ আঙুল। এরপর ভারতের ঋষভ পন্তের হাতে একটি সৌভাগ্যজনক আঘাত লাগায় তিনি ব্যাট করতে পারলেও উইকেটকিপিং করতে পারেননি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছেন ইংল্যান্ডের তরুণ অফ-স্পিনার শোয়েব বাশির। রাবীন্দ্র জাদেজার একটি জোরালো শট লাগে তার বাঁহাতের ছোট আঙুলে। ফলস্বরূপ, আঙুলে অস্ত্রোপচার করাতে হয় তাকে এবং তিনি ছিটকে পড়েছেন চতুর্থ টেস্ট (ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে) এবং পরের সপ্তাহের শেষ টেস্ট (ওভালে) থেকে। জাদেজার ব্যাটের একটি ঝাপটা যে কত বড় প্রভাব ফেলতে পারে — তা এখন ভাবাচ্ছে সবাইকে। বাশিরকে নিয়ে এতটাই পরিকল্পনা করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড যে এই সিরিজ বা অ্যাশেজের আগে তা থেকে সরে আসা ছিল কঠিন। কিন্তু এখন তারা পেয়ে গেছে এক অপ্রত্যাশিত সুযোগ — এক বিকল্প বাস্তবতায় চোখ রাখার। এটা যেন এক “Sliding Daws” মুহূর্ত — একটু শব্দ খেলার ছলে বলা চলে। 🧢 লিয়াম ডসন: এক ভিন্ন জগতের ক্রিকেটার প্রায় আট বছর পর টেস্ট দলে ফিরেছেন লিয়াম ডসন — এবং তিনি বাশিরের সম্পূর্ণ বিপরীত। বাশিরকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বেন স্টোকসের চোখে পড়া একটি সোশ্যাল মিডিয়া ক্লিপের ভিত্তিতে, আর ডসনকে বছরের পর বছর অবহেলা করা হয়েছে, যদিও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্যান ফেভারিট। বাশিরের প্রথম শ্রেণির রেকর্ড প্রায় নেই বললেই চলে, তবু সুযোগ পেয়েছেন। ডসনের রেকর্ড চোখ ধাঁধানো, তবুও তাকে দলে নেওয়া হয়নি। বাশির লম্বা, ডসন ছোটখাটো। বাশির ২১ বছর বয়সী, ডসন ৩৫। বাশির ডানহাতি, ডসন বাঁহাতি। বাশির মূলত একজন বোলার, ডসন একজন অলরাউন্ডার। ডসনের প্রথম শ্রেণির রান ভারতের পুরো স্কোয়াডের যেকোনো ব্যাটসম্যানের থেকেও বেশি! 🔬 বাশির: একটি পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা বাশিরকে নিয়ে ইংল্যান্ড যেন এক সাহসী পরীক্ষা চালিয়েছে — আন্তর্জাতিক মঞ্চেই একজন ক্রিকেটারকে গড়ে তোলার চেষ্টা। তার ৩৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের মধ্যে ১৯টিই টেস্ট! এটা এক কথায় নজিরবিহীন। তবে তার মধ্যে প্রতিভা আছে। সোমারসেটের এই তরুণ বোলার ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ৫০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যারা ৫০ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন, তাদের মধ্যে গ্রায়েম সোয়ানের পরই বাশিরের স্ট্রাইক রেট। তবে তার পারফরম্যান্স ওঠানামার — এক ধাপ এগিয়ে আবার এক ধাপ পেছনে। চলতি বছরের মে মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে কিছু টেকনিক্যাল পরিবর্তন করেন বাশির — স্টাম্পের কাছ থেকে বল করা ও লাইন ঠিক রাখার ফলে ৯ উইকেট পান সেই ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে আবার ফিরে গেছেন বাইরের অ্যাঙ্গেল থেকে বল করতে। তারপরও তার লাইন নির্ভরযোগ্য থেকেছে। এমন এক সিরিজে, যেখানে স্পিনাররা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি, সেখানে বাশিরই দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ উইকেট নিয়েছেন। জাদেজা, যিনি অনেক বেশি অভিজ্ঞ, সেখানে পেয়েছেন মাত্র ৩ উইকেট। 📌 ডসনের আগমন: সুযোগ নাকি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত? বাশিরের ইনজুরি ডসনের জন্য খুলে দিয়েছে এক সুযোগের দরজা — এমন এক ক্রিকেটারের জন্য যিনি ধারাবাহিকভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেছেন, তবুও উপেক্ষিত ছিলেন। হয়তো এই সুযোগ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু এটি ইংল্যান্ডের জন্য এক বিকল্প বাস্তবতার জানালা খুলে দিয়েছে। এক বাস্তবতা যেখানে প্রতিশ্রুতি নয় — ধারাবাহিকতা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যাটে-বলে সামর্থ্যই মূল যোগ্যতা। ক্রিকেটে, জীবনের মতোই, কখনও কখনও একটি ব্যাটের ঘূর্ণি বা আঙুলের মোচড় বদলে দিতে পারে পুরো গল্প।

Post a Comment

0 Comments